স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৭-৮ বছর ধরে উপজেলার রামনাথপুরের মানুষ ইটভাটা অপসারণের দাবি জানালেও ভাটা মালিকরা শোনেননি। উল্টো তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি ভাটার লাইসেন্স শেষ হলেও তাদের দাপট কমছে না।
এলাকাবাসী জানায়, রামনাথপুর গ্রামের ৮০ শতাংশ লোকের পেশা কৃষি। জমিতে কাজ না থাকায় সেখানকার মানুষ এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে যায়। অবৈধ ইটভাটার কারণে গ্রামের পরিবেশ সহনীয় নেই। গ্রামের মধ্যে ঢুকলেই কাশি আসতে থাকে। বাতাসে চোখ জ্বলে। সাদা কাপড় কালো হয়ে আসে। গায়ের পোশাকের ওপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে। আশপাশের গাছপালা নষ্ট হচ্ছে। পানের বরজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেন না।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ২০০৫ সালে অখিল বন্ধু ঘোষ, মজিদ মোড়ল ও চিত্তরঞ্জন মন্ডল কপোতাক্ষ নদী সংলগ্ন এলাকায় ‘যমুনা ব্রিকস’নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন। পরে তারা ৭টি শর্তে অখিল বন্ধু ঘোষের নামে ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে ভাটা পরিচালনার লাইসেন্স পান। ২০১৫ সালের ৩০ জুন ওই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে ওই ভাটা থেকে নিজের বিনিয়োগের অংশ তুলে নেন অখিল বন্ধু ঘোষ। সে সময় তিনি জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিতভাবে ভাটা পরিচালনা করবেন না বলে অবহিত করেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসক ওই ভাটার লাইসেন্স বাতিল করেন।
আরও পড়ুন: মাগুরায় ৬টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত
লালমনিরহাটে অবৈধ ইটভাটাকে লাখ টাকা জরিমানা
বর্তমানে অপর মালিক চিত্তরঞ্জন মন্ডল, মজিদ মোড়ল ও তার (মজিদ) ছেলে মিঠু মোড়ল ভাটাটি পরিচালনা করছেন। একই সাথে ভাটার পাশে জনবহুল এলাকায় ‘যমুনা ব্রিকস-০২’ নামে আরেকটি ভাটা স্থাপন করছেন।
ভাটার মূল মালিক অখিল বন্ধু ঘোষ বলেন, ‘আমি যখন ভাটা করি, তখন ওই এলাকায় জনবসতি কম ছিল। জমিও ছিল ৪৫ বিঘার মতো। পরে স্থানীয়দের দাবিতে ভাটা বন্ধ করে জেলা প্রশাসক দপ্তরে লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করি। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ওই লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। কিন্তু লাইসেন্স বাতিল হওয়া ভাটা এখনো চলছে। জানি না প্রশাসন কী করছে। ওই এলাকার মানুষ বিপদে রয়েছেন।’
এলাকার গৃহবধূ শেফালী বিশ্বাস (৫৫) বলেন, ‘আমরা পরিবেশ উপমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে ভাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছি। তারা আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আমরা মরতে বসেছি। বাচ্চা ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। ভাটার ছাঁইয়ে ঘর, রান্না করা খাবার খাওয়া যায় না। আমরা তো বিষ খাচ্ছি। এখানকার মেয়ে-বউরা প্রতিনিয়ত ভাটা শ্রমিকদের বাজে কথা-ব্যবহারের শিকার হন। এ থেকে আমরা মুক্তি চাই।’
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে অবৈধ ইটভাটা সাতদিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ
ফরিদপুরে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা
মেগাপ্রকল্প নির্মাণ এবং আশেপাশের ইটভাটার কারণে ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়ছে: মন্ত্রী
কৃষক অশোক কুমার দাস বলেন, ‘আমার ৩-৪ বিঘা জমিতে পান চাষ করতাম। এখন সব কয়লা খনি! গরমকালে এখানে বাস করা দুরুহ।’
সম্প্রতি সাংবাদিকরা ওই এলাকা ঘুরে আসার পর ভাটা শ্রমিকরা স্থানীয়দের হুমকি-ধমকি, অশ্লীল ভাষার গালিগালাজ করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
যমুনা ব্রিকসের মালিক চিত্তরঞ্জন মন্ডল ইটভাটার লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। যে শ্রমিক স্থানীয়দের সাথে দুব্যর্বহার করছে, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমরা আইন মেনে ভাটা চালাতে চাই।’
পাইকগাছা উপজলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘ওই ভাটায় দ্রুত অভিযান চালানা হবে। কোনোভাবেই অবৈধভাবে ভাটা চলতে দেয়া হবে না।’